পরিবেশ বিপর্যয়
প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনায় প্রাণী জগৎ, উদ্ভিদজগৎ ও বায়ুমণ্ডলের অনিষ্ট সৃষ্টিকারী বস্তুর উপস্থিতি যা পরিবেশগত ভারসাম্যকে ধ্বংস করে তাই পরিবেশ বিপর্যয়।
পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণসমূহ: পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হল: পানি দূষণ; বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ ও মাটি দূষণ ।
পানি দূষণ: পানিতে বিষাক্ত দ্রব্য বা দূষিত বর্জ্য পদার্থ মিশ্রণের ফলে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়াকে পানি দূষণ বলে। যে সকল কারণে পানি দূষিত হয় তা হল: কলকারখানার বর্জ্য পানিতে মিশে পানির লাইন ফেটে এর সাথে ময়লা আবর্জনা মিশে, ফসলের কীটনাশক পানিতে মিশে, পানিতে কাপড় পরিষ্কার, মানুষ ও গবাদী পশুর গোসল করার দ্বারাও পানি দূষিত হয়।
পানি দূষণের প্রভাবঃ পানি দূষণের ফলে বিভিন্ন ধরণের পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। যেমন : ডায়রিয়া; টাইফয়েড, কলেরা, জন্ডিস, অ্যামোবিক আমাশয় ইত্যাদি ।
পানি দূষণমুক্ত রাখতে করণীয় :
- পানিতে আবর্জনা, সার বা বিষাক্ত দ্রব্য না ফেলা।
- উপযুক্ত পরঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা।
- ভূগর্ভস্থ পানির পরিমিত ব্যবহার।
- জমিতে সার বা কীটনাশক ব্যবহারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
বায়ু দূষণ: বায়ু যখন প্রাণী ও উদ্ভীদের জন্য ব্যবহার অনুপযোগী হয় তখন তাকে বায়ু দূষণ বলে। বায়ুতে সীসা ও কার্বন মনো-অক্সাইড মিশ্রণের ফলে মানুষ দিন দিন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। যে সকল কারণে বায়ু দূষণ হয়: তেজস্ক্রিয়তার দ্বারা, কল-কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ার ধারা, যান-বাহনের থেকে নির্গত ধোঁয়া। বিভিন্ন ধরণের বারুদ ও বোমা বিস্ফোরণ ইত্যাদি ।
বায়ু দূষণের প্রভাবঃ বায়ু দূষণের ফলে মানুষ যে সকল রোগে আক্রান্ত হয় তা হল শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে কষ্ট, রক্তের অক্সিজেন পরিবহন ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি।
বায়ু দূষণমুক্ত রাখতে করণীয়:
- ১. ধুমপানের ধোঁয়া, যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- ২. ওজোন স্তরে ছিদ্র হয়ে যে সমস্যার সম্ভাবনা রয়েছে তা প্রতিরোধ করা।
- ৩. গ্রীণ হাউজ গ্যাসের কারণে উচ্চতা বৃদ্ধি রোধ করা ।
- ৪. আবর্জনাকে ধরণ অনুযায়ী পৃথক করে জমা ও অপসারণ করা।
- ৫. জনগণকে বৃক্ষ রোপনে উৎসাহী করা।
শব্দ দূষণ: শব্দ ৮০ ডেসিবলের বেশি হলে তা ক্ষতিকর। শব্দ দূষণের ফলে মারাত্মক রোগের সৃষ্টি হতে পারে। যে সকল কারণে শব্দ দূষণ হয়: গাড়ীর হর্ণ, ঘণ্টার শব্দ, কল-কারখানার শব্দ ইত্যাদির দ্বারা।
শব্দ দূষণের প্রভাব: শব্দ দূষণের ফলে বিভিন্ন মানসিক রোগ হতে পারে।
শব্দ দূষণ রোধে করণীয় :
- উচ্চস্বরে কথা/চিৎকার করা যাবে না।
- জোরে গান বাজানো যাবে না ।
- হাইড্রোলিক হর্ণ/ বোমাবাজি / বিকট আওয়াজে স্লোগান ইত্যাদি করা যাবে না।
- শব্দ শোষক যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।
মাটি দূষণ: মাটি দূষণ বলতে মাটির উর্বরতা ক্ষমতা হ্রাস পাওয়াকে বুঝায়। বিভিন্ন কারণে মাটি দূষণ ঘটে। যেমন: ভূমিক্ষয়, বায়ু প্রবাহ, বন্যা, বৃক্ষ নিধন, জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ, প্লাস্টিকের ব্যবহার ইত্যাদি।
মাটি দূষণের প্রভাব: মাটি দূষণের ফলে মাটির উর্বরতা ক্ষমতা হ্রাস পায়।
মাটি দূষণ মুক্ত রাখতে করণীয়:
- ১. প্লাস্টিকের ব্যাগ, পলিথিন পরিহার করতে হবে।
- ২. বৃক্ষরোপন, পাহাড় ও উচ্চভূমি করতে হবে
- ৩. কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হবে।
- ৪. ইটের বিকল্পে ব্লক ইট ব্যবহার।
- ৫. পরিকল্পিত শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।